যন্ত্রনার মধ্যে আছি। মহাযন্ত্রনা! আমি কত বড় কর্মকর্তা জানি না। কিন্তু অফিসে আমার জি এম, মানে মহা ব্যবস্থাপক আমাকে মহা যন্ত্রনা দিচ্ছেন ইদানিং। তিনি আবার অর্থনীতির জিএম, মানে ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্ট। চরম দাপটের জায়গা। আমাদের অর্থমন্ত্রীকে দেখেই বুঝা যায়।
আর আমি এতদিন বিদেশ-বিভূঁই করে আজ কি কপালে, কোন্ ফেরে যে দায়িত্ব পেলাম সেই 'মানব সম্পদ বিভাগ'-এর যার কাজই মানবকুলের ওঠা-বসা, চলা-ফেরা, কে কি করে, কই যায়? আসে কি না আসে, যায় কি না যায়? কাজ-কাম যা করে তার ওজন কত? মাপ-জোক রাখতে হয়, কারন মানবের সঙ্গে আবার সম্পদ জড়িয়ে আছে। সম্পদের মান (standard) থাকা চাই। এই সব মিলিয়ে আমাকে মানবের সুরতহাল তৈরী রাখতে হয়। আর এইসব করতে গিয়ে আমাকে পুরো গোয়েন্দাগীরি করতে হয়। এক ধরনের গুপ্তচরবৃত্তি। কাকে ছেড়ে কাকে ধরি।চোখ-কান খাড়া রাখতে হয় সর্ব সময়। চোখ দিয়ে না দেখতে পাও তো মাথা দিয়ে দেখো।মানে মাথা খাটিয়ে সুরতহাল তৈরি করো। পিছনেও চোখ থাকতে হবে, যেন কোন টিকি পাশ কাটিয়ে না যেতে পারে। আর উচ্চতা বাড়াতে হবে। শরীর ছোট-বড় কোন ব্যাপার না, কিন্তু মেধার উচ্চতা বাড়াতে হবে। ওখানে কোন আপোষ নেই। কেউ ছুঁতে চাইলে তাকে যেন জিরাফ হতে হয়। আর নথিপত্র হতে হবে একেবারে টাইট্। মানব সম্পদের সারা বছরের হিসাব-নিকাশ হবে ঐ নথি দেখে। আমার অবস্থা তাই 'কোন কুলে ভিড়াই তরী'! আমার দাঁড়িপাল্লা কেবলই এদিক-ওদিক ওঠা নামা করে। শ্যাম-কুল দু'টোই যায় যায় অবস্থা! আমি ছা পোষা মানুষ। জীবনের তলানীতে মনে হয় মাত্র কয়েকটা দিন পড়ে আছে। ভালোয় ভালোয় কাটিয়ে দিতে পারলে চরম স্বস্তি। কিন্তু জিএম সাহেব কি করে বুঝতে পারলেন আমি পরম শান্তিতে আছি, ব্যস্ উনি নানা রকম রাস্তা বের করছেন আমার নিদ্ হারাম করবার জন্য।
আজ সকালে দপ্তরে বসে আছি। আয়েস করে চা-টা শেষ করলাম। ইন্টারকম বেজে উঠলো.."শফিক সাহেব, কেমন আছেন? আপনি কিন্তু দু'চারটা জিনিষ প্রোভাইড করছেন না।" সেটা আবার কি! জিজ্ঞেস করতেই বললেন, 'ডাইরেক্টর সাহেবের এ্যাটেন্ডেন্স কার্ড, ওদিকে ফাইন্যান্স ডাইরেক্টরের কার্ডও দিচ্ছেন না।' আমার হাত থেকে রিসিভারটা পড়তে পড়তে বেঁচে গেল।
'এদেরও হাজিরা-নথি (attendance record) লাগবে?'
'লাগবে না কেন? তারাও তো বেতনভুক কর্মচারী।' তিনি যেন একটু অশ্চর্য হয়েই বললেন।
আমি মহাব্যবস্থাপক মহাশয়কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনিই ব্যপারটি ফয়সালা করে নিন না। স্যারদের বলুন আ্যাটেন্ড্যান্সটা জরুরি, মেনটেইন করতে হবে।।‘
‘না না, তা কি করে হয়! এটাতো আপনার ডিপর্টমেন্টের কাজ।‘ তিনি সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে বাঁচিয়ে জবাব দিলেন।
আমি একটু নড়ে-চড়ে বসলাম, এদিক সেদিক তাকালাম টেলিভিশনের সেই বাংলালিংকের চিনির দরের বিজ্ঞাপনের কর্মচারীর মতো। আমার বুঝতে আর কোনই কষ্ট হলো না যে আমার সময় হয়ে গেছে। জিএম সাহেব এইবার আমার নিষ্ক্রান্তের পথ খুঁজে পেয়েছেন। যেই মূহুর্তে আমি এই মহামূল্যবান নথির যোগাড়যন্ত্রে বরুবো, সেই মূহুর্তেই আমার বারোটা বাজার ঘন্টাধ্বনি বেজে উঠবে। আসলে এই অর্থ বিভাগের মন্ত্রীই হোক আর মহাব্যবস্থাপক বা ব্যবস্থাপক যেই হোক, তাদের আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে টাকা বেড়িয়ে যাওয়াটা বড়ই কষ্টকর। একটু ছেল্ কুত্ কুত্ না খেললে ভাল লাগে না।
গুম হয়ে বসে রইলাম কিছুক্ষন। আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না যে আমার যারা মনিব মানে Boss, তাদেরকে আমি কি করে মানব সম্পদ বিভাগের অধীনে নিয়ে আসি! এরা আবার সম্পদের মধ্যে পড়ে কিনা সেও তো এক কথা। প্রতিদিন এদের হাজিরা নথি চেক করতে হবে নাকি! চোখ বন্ধ করে এসব ভাবতে ভাবতেই এক সময় দেখি এই ভাবনা উবে গেছে। তার জায়গায় স্থান করে নিয়েছে আমি কিভাবে চাকরি থেকে ইস্তফার চিঠি লিখবো সেই ভাবনা। কত সুন্দর একটা চিঠি লিখে এই চাকরি থেকে নিষ্ক্রান্ত হওয়া যায় সেই ভাবনা। বরখাস্তের চেয়ে স্বেচ্ছা নিষ্ক্রমন অনেক ভাল।
চাকরিটা ছেড়ে দেবার পর কোথায় কোথায় দরখাস্ত করা যায় এইসব ভাবছি, এমন সময় নতুন এক ভাবনা চেপে বসলো। আমি ভাবতে বসলাম, দেশের প্রধানমন্ত্রী হাজিরা নথি মেনটেইন করে কিনা। অথবা মন্ত্রীপরিষদের কি অবস্থা! তারাও তো সংবিধান মতে এই দেশের কর্মচারী। তেনারা কি হাজিরা বই মেনটেইন করেন! আচ্ছা, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে কি 'মানব-সম্পদ বিভাগ' আছে! তার অবস্থাটাও জানা দরকার। আমার আর কোন উপায় নেই। এই ব্যাপারটা আমাকে জানতেই হবে। যদি কোন ভাবে এই ব্যাপারটা বের করতে পারি তা'হলে আমি গাজী। এস্পার-ওস্পার একটা কিছু করা যাবে। আর তা না হ'লে আমার সব শেষ।
অর্থ নিয়ে যিনি নাড়া-চাড়া করেন তার তলোয়ারের ধার সব সময়ই বেশী। দ্যাখেন না, নতুন টাকায় কেমন খ্যাঁচ করে হাত কেটে যায়! জয়তু মহাব্যবস্থাপক!
২৩ অক্টোবর - ২০১৩
গল্প/কবিতা:
১৬ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।
প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী